প্রতীক্ষা শেষে দেবীবরণ পাল বাড়ির ঠাকুরদালানে : জৌলুস কমলেও ঐতিহ‍্য আজও বহমান সমান ধারায়

22nd October 2020 6:00 pm বাঁকুড়া
প্রতীক্ষা শেষে দেবীবরণ পাল বাড়ির ঠাকুরদালানে : জৌলুস কমলেও ঐতিহ‍্য আজও বহমান সমান ধারায়


দেবব্রত মন্ডল ( বাঁকুড়া ) :  নীলাভ আকাশে তুষার শুভ্র সাদা মেঘের আনাগোনা। চিকচিকে দমোদরের চরে কাশফুলের উঁকিঝুঁকি। এরই মাঝে সোমসারের প্রাচীন জমিদার বাড়ি আড়াইশো বছরের পুরনো দুর্গাপূজা। পাল বংশের সূচনা হয়েছিল চন্দ্রমোহন পালের হাত ধরে। পাল বংশের পূর্বপুরুষ চন্দ্রমোহন পাল তাদের জমিদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাঁকুড়া জেলার শেষ সীমানায় ইন্দাসের সোমসারে। বাঁকুড়া জেলার একেবারে পশ্চিম প্রান্ত দামোদর নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল প্রাচীন জনপদ সোমসারের পাল জমিদার বাড়ি।সেই থেকেই পাল জমিদার বাড়ি প্রায় তিনশো বছরের পুরানো ইতিহাস সাক্ষী। সে সময় চন্দ্রমোহন পালের বিলিতি বস্তের ব্যবসার প্রভাব প্রতিপত্তি গড়ে উঠেছিল গোটা বাংলা জুড়ে। ব্যাবসা বাংলা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিহার এবং উড়িষ্যাতেও। ব্যবসায়িক আমদানি রপ্তানি ও বেশি মুনাফা লাভের কারণে তিনি কলকাতার গঙ্গা বক্ষে একটি ঘাট নির্মাণ করেছিলেন। যা পরে চাঁদপালঘাট নামে পরিচিতি পায়। চন্দ্রমোহন পাল ব্যবসায়িক সূত্রে বেশিরভাগ সময় ঘুরে বেড়াতেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।বাংলার দুই প্রান্তের ব্যবসা দেখাশোনার সুবিধার কারণে তিনি কলকাতার উল্টোডাঙ্গা বাড়ি ছেড়ে বেশিরভাগ সময় বসবাস করতেন বর্ধমানে। একদিন তিনি বর্ধমান থেকে দামোদরের জলে ডিঙ্গি ভাসান পশ্চিমদিকে। দামোদর তীরে বাঁকুড়া এবং বর্ধমানের সীমানা বরাবর একটি জায়গায় দেখে তার পছন্দ হয়। পরে তিনি সেখানেই ছয়টি তালুক কিনেই বাণিজ্য শুরু করেন। পরে স্বপ্নাদেশের শুরু হয় দেবী দুর্গার আরাধনা। পাল বংশের তৎকালীন দুর্গাপূজার আরম্ভর ছিল কল্পনাতীত।পুজোর সময় গরীব দুঃখীদের জন্য বিলি করা হতো বিলিতি কাপড়। পালবাড়ি আলোকিত হতো বিদেশি রোশনাই এর আলোর ছটায়। ঢাক ঢোল ছাড়াও নহবতের সানাই এর সুরের মূর্ছনায় মুখরিত হতো দুর্গা দালান, অন্দরমহল, আটচালা সহ গোটা পালবাড়ির চারিদিক। বসতো কবিগান লড়াই, রামলীলার আসর, পুতুল নাচ ও পূজোর চার দিন কলকাতার যাত্রাপালা দল ঠাকুরদালানে আসর মাতাতেন। তবে এখন সেসব ইতিহাসের পাতায়। কালের নিয়মে জমিদারির রমরমা না থাকলেও জৌলুস কমলেও পুজোর সময় ফিবছর নিয়ম নীতি মেনেই পূজিতা হন পাল বাড়িতে মা মহামায়া। কর্মসূত্রে যারা বাড়ির বাইরে থাকেন এ সময় এসে পৌঁছান প্রাচীন এই পাল বাড়িতে। এই চারটে দিন হাসি ঠাট্টা আনন্দ খাওয়া দাওয়া মেতে ওঠে গোটা পালবাড়ি। তবে এবার করোনা আবহে কিছুটা হলেও যেন বিষন্নতার সুর পালবাড়ি সদস্যদের মধ্যে। অনেকেই এবছর আসতে পারবেন না পাল বাড়ির পুজোতে। তবে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে গ্রামের সকলেই ভিড় জমান এই পাল বাড়ির দূর্গো পুজো দেখতে। এই চারটে দিন জমিদারিরত্বের আরম্ভর ছেড়ে জমিদার বাড়ির মা মেয়ে বউ রাও লেগে পড়েন পূজার সরঞ্জাম জোগাড় করতে। পূজোর দিন পালবাড়ি সদস্যদের মধ্যে এক কর্মব্যস্ততায় পরিণত হয়। সকাল থেকেই পূজোর সামগ্রী ধোঁয়া মোছা, ফুল পাড়া,মালা গাঁথা, ফল কাটা, ঠাকুরদালান আলপনা দেওয়ার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন পাল বাড়ির মহিলারা। জৌলুস কমলেও আজও কোনো খামতি হয় না নিয়ম নীতির নিষ্ঠার।





Others News

মল্লরাজ ভূমিতে তোপধ্বনিতে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণ : পুজো ঘিরে উন্মাদনা

মল্লরাজ ভূমিতে তোপধ্বনিতে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণ : পুজো ঘিরে উন্মাদনা


দেবব্রত মন্ডল ( বাঁকুড়া ) : তোপধ্বনি তে কেঁপে উঠল বিষ্ণুপুর । শুরু হল মল্ল রাজাদের ১০২৫ বছরের অষ্টমী পূজোর সন্ধিক্ষণ।

প্রাচীণ ঐতিহ্য ও পরম্পরা মেনে আজও নিষ্ঠাভরে বিষ্ণুপুর রাজ বাড়িতে দেবী দুর্গা 'মৃন্ময়ী নামে পূজিতা হন। জানা গিয়েছে, পূর্ব প্রথা মতোই প্রাচীণ রীতি মেনে মহাষ্টমীর সন্ধিক্ষণে কামান দাগার মধ্য দিয়ে বিষ্ণুপুর রাজ বাড়িতে শুরু হয়ে গেল 'বড় ঠাকরুনে'র পুজো। তবে এবার করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দর্শক সাধারণের উপস্থিতি ছিল বাঁধভাঙ্গা। সরকারী নিয়মকে মান্যতা দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হয়েছে দেবী বন্দনা। এমনকি এখানে কামান দাগার পর্বেও অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরে অল্প সংখ্যক লোককে নিয়ে ঐ কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে।

শুরুর সময় থেকে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণ ঘোষণা করা হয় বড় কামানের গর্জনের শব্দে। যার আওয়াজে রাজবাড়িতে আরতি নৃত্যও শুরু হয়ে যায়।